জাল আধার চক্রে দিল্লী থেকে গ্রেফতার ৮ দালাল সহ একাধিক বাংলাদেশী
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা - হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশের সমস্যা বেড়েছে ভারতে। সেই সঙ্গে প্রকাশ্যে এসেছে জাল পরিচয়পত্র তৈরির চক্র। এবার বাংলাদেশীদের অবৈধভাবে আশ্রয় দেওয়া একটি চক্রের পর্দাফাঁস করেছে দিল্লি পুলিশ। এ নিয়ে আট প্রতারকসহ একাধিক বাংলাদেশীকে গ্রেফতার করেছে তদন্তকারীরা।
সূত্রের খবর, বাংলাদেশিসহ অবৈধ আশ্রয়কেন্দ্রের একটি চক্রের সন্ধান পেয়ে অভিযান চালিয়েছিল দিল্লির দক্ষিণ জেলার পুলিশ। গোপনে অভিযান চালিয়ে এই চক্রের পর্দাফাঁস করেছে দিল্লি পুলিশ। জানা যাচ্ছে নিজামুদ্দিনের বাসিন্দা মহম্মদ মইনুদ্দিন এই গ্যাংয়ের নেতা। অবৈধভাবে দেশে আসা বাংলাদেশিদের জাল আধার কার্ড, প্যান কার্ড, বার্থ সার্টিফিকেট এবং অন্যান্য জাল নথি তৈরি করত সে। ফটোশপ ও এডিটিং টুলের সাহায্যে এই কাজ করা হত। অভিযুক্ত ইউআইডিএআই নিবন্ধিত আধার এজেন্ট জুলফিকার আনসারি, জাভেদ এবং উত্তরপ্রদেশের বুলন্দশহরের বাসিন্দা ফরমান খানের সহযোগিতায় এই চক্রটি পরিচালনা করছিল।
এ ছাড়া নিজামুদ্দিন বস্তির বাসিন্দা মহম্মদ শাহিন দিল্লিতে বাংলাদেশিদের ডেলিভারি ও সাফাইয়ের কাজ দিতেন। পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনার বাসিন্দা নিজামুদ্দিনের বাসিন্দা মনোয়ার হোসেন, নিমাই কর্মকার ও গৌরাঙ্গ দত্ত দিল্লি থেকে বেআইনি টাকা বাংলাদেশে পাঠাতেন। মনোয়ার হজরত নিজামুদ্দিন দরগায় কাজ করতেন এবং নিমাই ও গৌরাঙ্গা ফরেক্স এজেন্ট ছিলেন।
ধৃতদের কাছ থেকে ২৩টি ভোটার আইডি কার্ড, ১৯টি প্যান কার্ড, ১৭টি আধার কার্ড, একটি সিপিইউ, ১১টি বার্থ সার্টিফিকেট এবং অন্যান্য নথি উদ্ধার করা হয়েছে। অভিযুক্তরা ইউপিআই অ্যাপের মাধ্যমে সীমান্তের দালালদের টাকা পাঠাত। এর পরে এজেন্টরা দিল্লিতে অবৈধভাবে বসবাসকারী বাংলাদেশিদের পরিবারের কাছে টাকা পাঠাত।
পাশাপাশি গ্রেফতার হয়েছে একাধিক বাংলাদেশী। ধৃতদের মধ্যে আছে ভোগাল এলাকার বাসিন্দা মহম্মদ জুয়েল ইসলাম ও তার বড় ভাই মহাম্মদ আলমগির দিল্লিতে এসে স্ক্র্যাপ ডিলার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। আলমগির ২০০৭ সালে একজন ভারতীয় মহিলাকে বিয়ে করেছিলেন এবং তাদের দুটি সন্তান রয়েছে। ২০২১ সালে ভারতে এসেছিল জুয়েল ইসলাম। অন্যান্য ধৃতরা হলেন লতিফ খান, মহম্মদ মিজানুর রহমান ও রবিউল। তারা কোটলা মোবারকপুরের বাসিন্দা। এই তিন জনেরই পরিবার বাংলাদেশে বসবাস করে। লতিফের ভাই নাদিম শেখ ২০২১ সালে সাফাইকর্মী হিসাবে কাজ করতে দিল্লি চলে আসেন।
অপরদিকে ভালসোয়া ডেয়ারির জেজে কলোনিতে অবৈধভাবে বসবাস করা মহম্মদ রিজাউল ২০০০ সালে এখানে এসে এক ভারতীয় মহিলাকে বিয়ে করেন এবং ক্যাব চালক হিসাবে কাজ শুরু করেন। তিনি কোনওরকমে ভারতীয় পাসপোর্ট জোগাড় করতে সক্ষম হন এবং এর পরে তিনি ক্রমাগত দিল্লি থেকে বাংলাদেশে যাতায়াত শুরু করেন। তিনি দিল্লি থেকে টাকা নিয়ে বাংলাদেশে বসবাসকারী অন্য অভিযুক্তদের পরিবারের কাছে পাঠাতেন। গত দুই বছরে তিনি ২২ বার ভারত থেকে নেপাল ভ্রমণ করেছেন। এই মামলায় আরও এক অভিযুক্ত কামরুজ্জামান ২০১৪ সালে দিল্লিতে এসে ডেলিভারি বয়ের কাজ শুরু করেন। আলমগির, লতিফ ও কামরুজ্জামানের ভারতীয় আধার কার্ড ও প্যান কার্ড রয়েছে।