জীবনে নানান সমস্যার সম্মুখীন হলেও পরাজিত হয়নি অপরাজিতা
টিভি নাইনটিন এক্সক্লুসিভ - মানুষের জীবনে দুঃখ, কষ্ট,খারাপ পরিস্থিতি আসতেই পারে।তবে হার মেনে নিলে চলবে না। লড়াই না করতে পারলে হেরে যাওয়া ছাড়া পথ নেই।তবে এই হার,জিতের মধ্যেও বাঁচতে ভুলে গেলে চলবে না।যেমনটা করেননি অপরাজিতা গুপ্ত। জমিদার বাড়ির মেয়ে হয়েও বাবাকে বাবা বলে না ডাকতে পারায় পরবর্তীতে নিজের বংশের নামও পরিবর্তন করে হয়েছেন অপরাজিতা।চলুন জেনে নেওয়া যাক তারই জীবন যুদ্ধের কাহিনী।
দুঃখ কষ্ট যেন তার জন্ম থেকেই ভাগ্যের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে। বাবার যখন ৫৮ বছর বয়স তখন অপরাজিতার জন্ম হয়। বাড়ির সব থেকে ছোট সদস্য হওয়ায় তাকে কেউই অতটা গুরুত্ব দিত না। বাবাকে বাবা বলার অধিকারটুকুও ছিল না অপরাজিতার। সে নিজেকে পালিতা কন্যা মনে করতো। তিনি জমিদার পরিবারের মেয়ে হয়েও কোনোও প্রকার আভিজাত্য উপভোগ করার সুযোগ পায়নি। অনেকগুলি সন্তান থাকায় ছোট মেয়েটিকে নিয়ে যেন কারোরই কোন মাথা ব্যাথা ছিল না। দাদা দিদিরা স্কুলে পড়াশোনা করলেও ছোট মেয়েটির আট বছর বয়স হয়ে গেলেও তাকে বিদ্যালয়ে ভর্তি করার মাথা ব্যাথা কারোর মধ্যেই ছিল না।
পরিবারের সকলে সুদর্শন হওয়ায় অপরাজিতাকে কেউ মেনে নিতে চায়নি। সকলে মিলে তাকে বলতো অন্য বাচ্চার সঙ্গে সে পরিবর্তন হয়ে গেছে। একসময় অপরাজিতাও সেই কথা সত্য বলে মেনে নিতে শুরু করে। কলেজে পড়াকালীন তার বাবা মারা যান। ছোট বোনটির বিয়ের খরচ বাঁচানোর জন্য তাকে তাড়ানোর পরিকল্পনা করতে থাকে পরিবারের সকল সদস্য। তাই পড়াশোনা চালানোর জন্য বিয়ে করে নেন অপরাজিতা। পরবর্তীতে অপরাজিতার শ্বশুরবাড়িও কথা রাখবে বলে কথা রাখেনি।তাকে পড়াশোনার পরিবর্তে ঘরের কাজ বেশি করানো হতো। তার পড়াশোনা এক প্রকার বন্ধই করে দেওয়া হয়েছিল।
তাই পড়াশোনার জন্য শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে বাপের বাড়ি চলে আসেন অপরাজিতা। নিজের বাড়িরই একটি অংশ ভাড়া নিয়ে থাকতে লাগলেন। সব কিছু ছেড়ে চলে আসার সময়ও তিনি জানতেন না তার পেটে বাচ্চা আছে। তার মা তার ডিভোর্সের সিদ্ধান্তকে কখনই সমর্থন জানায়নি।তাই নিজেও ওকালতনামা দিয়ে অপরাজিতা মুখার্জি গুপ্ত থেকে অপরাজিতা হয়ে যান। প্রসব যন্ত্রণা উঠলে একাই রিক্সা করে হাসপাতাল গিয়ে বাচ্চা জন্ম দিয়েছেন।তার মাও সেই সময় তার পাশে থাকেননি। ওষুধের ব্যবসা করে যখন নিজের অবলম্বন নিজেই হতে লাগলেন তখন ছেলের বয়স মাত্র ৬ বছর। ডিভোর্সের পর ছেলেকে নেওয়ার জন্য ব্যবসাটুকুও ছেড়ে দিয়ে চলে এসেছিলেন যাদবপুরে।
তারপর যাদবপুর ইউনিভার্সিটি থেকে মাস্টার্স পাশ করেন অপরাজিতা। ছেলেকে কাজ ছাড়া করবেন না বলে, রামকৃষ্ণ মিশনে ভর্তি করান।অনাথ শিশুদের মতো সুবিধা নিয়েই সেখানে পড়াশোনা চালায় তার ছেলে। এরপর তিনি সাংবাদিকতার লাইনে আসেন।' আজকাল ' পত্রিকায় কাজ করার সময় সে তার ছেলের পছন্দে আবার বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। কুড়ি বছর পর্যন্ত দ্বিতীয় বিয়ের অত্যাচার সহ্য করেছেন অপরাজিতা। শুধু মাত্র নিজের ছেলের পায়ে দাঁড়ানোর অপেক্ষায় ছিলেন। তারপর তিনি আবার দ্বিতীয় বিয়ে থেকে ডিভোর্স নিয়ে মুক্তি নেন। বর্তমানে তার ছেলে আমেরিকাতে থাকেন ও মাকে একটি নিজের বাড়ি করে দিয়েছেন। জীবনে অনেক সংগ্রাম চালিয়েও হেরে যাননি শেষমেষ তিনি নিজের আনন্দ খুঁজে পেয়েছেন। তিনি বর্তমানে ভালো আছেন সুখে আছেন।
নারীদের জীবন বরাবরই কাঠিন্যে ভরপুর। তবুও তারা হেরে যেতে নারাজ। কারণ তারা জানে জীবন একটাই হেরে গেলে জীবনও থেমে যাবে। অপরাজিতারও তাই শত বাঁধাবিপত্তি আসলেও জীবনে থেমে যাননি। নিজের পড়াশোনার ও ছেলের ভবিষ্যতের জন্য সবকিছু ত্যাগ করতেও রাজি ছিলেন। তার এই মনোবল ও সাহসিকতার জন্য তাকে কুর্নিশ জানানো প্রয়োজন। টিভি নাইনটিনের পক্ষ থেকে তার জন্য রইলো অনেক ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা।