“বিষ্ণু মাল হত্যাকাণ্ডে” সাত জনকে ফাঁসির সাজা শোনাল আদালত
নিজস্ব প্রতিনিধি, হুগলি - বিষ্ণু মাল হত্যাকান্ডে ফাঁসির সাজা ঘোষনা হল চুঁচুড়া আদালতে। কুখ্যাত দুষ্কৃতি বিশাল দাস ও তাঁর সাত সঙ্গীকে গত ২৫ নভেম্বর দোষী সাব্যস্ত করে চুঁচুড়া আদালতের ফার্স্ট ট্র্যাক কোর্ট। বৃহস্পতিবার এই মামলার সাজা ঘোষনা করেন বিচারক শিব শঙ্কর ঘোষ।
ত্রিকোণ প্রেমের জেরে ২০২০ সালের ১১ই অক্টোবর চুঁচুড়া শহরের জনবহুল এলাকা রায়ের-বেড় থেকে বছর তেইশের যুবক বিষ্ণু মালকে বাড়ির সামনে থেকে মোটর-বাইকে করে তুলে নিয়ে যায় হুগলির কুখ্যাত দুষ্কৃতী বিশাল দাস ও তাঁর সাগরেদরা। সেই রাতেই চাঁপদানি এলাকায় একটি বাড়িতে বিষ্ণুকে নৃশংসভাবে হত্যা করে বিশাল।ধর মুন্ডু আলাদা করে দেহ ছয় টুকরো করে।পরে প্যাকেটে করে শেওড়াফুলি ও বৈদ্যবাটির বিভিন্ন জায়গায় ফেলে দেয়।এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডে যুক্ত থাকা নয় অপরাধীকে পরবর্তী কালে বিভিন্ন সময়ে গ্রেফতার করে পুলিশ।বিশাল দাস ছাড়াও অভিযুক্তরা হল রামকৃষ্ণ মন্ডল,রথীন সিংহ,রাজকুমার প্রামানিক,রতন ব্যাপারী,বিনোদ দাস,বিপ্লব বিশ্বাস,মান্তু ঘোষ,ও সেখ মিন্টু।
পুলিশি জেরায় বিষ্ণুর দেহের খন্ডিত অংশ কোথায় কোথায় আছে তাঁর সন্ধান দেয় দুষ্কৃতিরা।পুলিশ বিষ্ণুর সেই খন্ডিত দেহাংশ উদ্ধার করলেও বিশাল কে না ধরা অব্দি বিষ্ণুর কাটা মুন্ডুর সন্ধান পায়নি পুলিশ।পরে ক্যানিংয়ের জীবনতলা থানা এলাকায় ৩ রা নভেম্বর কয়েকজনকে গুলি চালিয়ে স্থানীয়দের হাতে ধরা পড়ে বিশাল।পরে চন্দননগর পুলিশ তাকে নিয়ে আসে চুঁচুড়া থানায়।বিশালই সন্ধান দেয় বিষ্ণুর কাটা মুন্ডু কোথায় ফেলেছে।তারপর বৈদ্যবাটি খালের ধার থেকে প্লাস্টিকে মোড়ানো অবস্থায় মুন্ডু উদ্ধার করে পুলিশ।
এই নারকীয় হত্যার নিন্দায় সরব হয় সমাজের সর্বস্তরের মানুষ।যতবারই দুষ্কৃতি বিশাল দাস ও তাঁর সাগরেদদের আদালতে তোলা হয়েছে ততবারই সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ প্রতিবাদে সরব হয়েছিলেন দোষীদের ফাঁসির দাবীতে।অবশেষে বৃহস্পতিবার “বিষ্ণু মাল হত্যাকান্ড” মামলার চুড়ান্ত রায়দান দেয় আদালত। ফাঁসির সাজা শোনানো হয় দুষ্কৃতীদের।
রায় ঘোষণার পরে আদালত থেকে কাঁদতে কাঁদতে বেড়িয়ে আসেন মৃত বিষ্ণুর মা,বাবা, বোন। এদিন সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে বিষ্ণুর বাড়ির লোক বলেন, “আদালত আমাদের বিচার দিয়েছে। আমদের আইন পুলিশ সব ভাবে সাহায্য করেছে। সবাই আমাদের পাশে ছিল। আমাদের প্রতিবেশী, মানুষ সবাই লরাই করেছে।এই মাসেই আমার ছেলের জন্ম মাস। আর এই মাসেই আদালত তার খুনে সাজা দিয়েছে । এতে আমাদের আইনের উপর ভরসা পেয়েছি ”।
সরকারি আইনজীবী বিভাস চট্টোপাধ্যায় বলেন,’সাড়ে তিন বছরের লড়াই, তদন্তকারী থেকে প্রসিকিউশন সবাই ৩৪ জনকে স্বাক্ষী করা হয়। তথ্য প্রমাণ সাক্ষীদের বয়ান এই মামলায় গুরুত্বপূর্ণ ছিল।এই বীভৎস ঘটনা বিরলতম। আদালত আজ সাত জনকে ফাঁসির সাজা শোনায়। একজনের সাত বছরের জেল হয়েছে। এই মামলা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে’।