উত্তপ্ত টলিপাড়া! বন্ধ একাধিক সিরিয়ালের শ্যুটিং, কর্মবিরতির পথে টেকনিশায়ানরা
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা - ফের শোরগোল টলিপাড়ায়। উত্তেজনা ডিরেক্টরস গিল্ডের সঙ্গে ফেডারেশনের। যার জেরে এবার বন্ধ হয়ে গেল পরিচালক সৃজিত রায়ের নতুন সিরিয়ালের সেট তৈরির কাজ। বিষয়টি নিয়ে ফেসবুক লাইভে মুখ খুলেছেন পরিচালক। তার পরেই টলিপাড়ায় শুরু হয়েছে হইচই। পরিচালকের পাশে দাঁড়িয়েছেন পরমব্রত-অনির্বানরা।
সূত্রের খবর, টলিপাড়ায় পরিচালক সৃজিত রায়ের নামে অভিযোগ উঠেছে যে, তিনি কিছু দিন আগে ডিরেক্টরস গিল্ড এবং ফেডারেশন সম্পর্কিত একটি বিতর্কে টেকনিশিয়ানদের বিরুদ্ধে কিছু বিতর্কিত মন্তব্য করেন। এই মন্তব্যের পর টেকনিশিয়ানরা তাঁর বিরুদ্ধে অসন্তুষ্ট হয়ে কর্মবিরতির পথে হাঁটে। শনিবার রাতে খবর মেলে, আর্ট সেটিং গিল্ডের সদস্যরা শ্রীজিৎ রায়ের সঙ্গে কাজ করতে চান না। এরপর সোমবার সকালে পরিচালক জানান, গিল্ডের পক্ষ থেকে তাঁকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে, তাঁদের সদস্যরা তাঁর সঙ্গে কাজ না করবেন। তিনি একটি ফেসবুক লাইভে বলেন, "আমি শুধু কাজ করে উঠে এসেছি। আমি কখনোই টেকনিশিয়ানদের বিরুদ্ধে কিছু বলিনি। বরং, আমার আর্ট সেটিং গিল্ডের সঙ্গে সম্পর্ক ভাল। তবে, কিছু প্ররোচনা বা ভুল বোঝাবুঝির কারণে এই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।"
পরিচালক আরও বলেন, "আমি জানতে চাই যে আমাকে প্রমাণ দাও। গতকাল রাত পর্যন্ত আমাকে কোনও প্রমাণ দিতে পারেনি। প্রযোজক হিসেবে আমি ফেডারেশনকে মেলও করেছি যে কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। মেলটা কর্মবিরতির বিরুদ্ধেই করা হয়েছে। সেখানে দাঁড়িয়ে তাঁরাও আমার মেলের উত্তর দেয়নি। আমি জানিয়ে ছিলাম, এর যথাযথ বিচার করুন ও আমার সঙ্গে কাজটা করুন। ২৪ ঘণ্টা হতে চলল, সেই মেলেরও আমি উত্তর পায়নি কোনও। সেট বানাতে ২০ লক্ষ টাকার উপর ইনভেস্ট হয়ে গিয়েছে। আমাকে দেখা বুঝতেই পারছেন যে, আমি বিশালমাপের মানুষ নই। ২০ লক্ষ টাকা চলে গেলে আমাকে পথে বসতে হবে। আমার পেটে টান পড়বে। সংসারে অসুবিধা হবে।"
সৃজিতের লাইভের পরেই সোমবার সকালে দাসানি স্টুডিয়োতে হাজির হন ডিরেক্টর্স গিল্ড-এর সভাপতি সুব্রত সেন, সম্পাদক সুদেষ্ণা রায়, সংগঠনের কার্যকরী কমিটির সদস্য রাজ চক্রবর্তী, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, অনির্বাণ ভট্টাচাৰ্য সহ পরিচালক গিল্ডের আরও বেশ কয়েকজন সদস্য। এরপর সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে পরিচালক সুদেষ্ণা রায় বলেন, "কর্ম বিরতি করেছে। সৃজিতের সেটে কেউ আসেনি। কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছে, আমরা প্রশ্ন করছি কী আমাদের অন্যায়? কলাকুশলিদের কাছেও প্রশ্ন রাখছি। শিল্পীদের কাছেও বলছি, এটা সত্যি কি একটা সুস্থ পরিবেশ? যেখানে এক এক জন করে কাজ তাঁদের বন্ধ করে দেওয়া হবে? কাজ বন্ধ হলে কাদের ক্ষতি হচ্ছে? প্রযোজকের ক্ষতি হচ্ছে, পরিচালকের ক্ষতি হচ্ছে, প্রতিটা কলাকুশলির ক্ষতি হচ্ছে। আমাদের আবেদন, কে, কারা এটা করছেন? কারণ ক্ষতিগ্রস্থ কেবল তাঁরা নন, অভিনেতা-অভিনেত্রীরাও হচ্ছেন। তাঁদের আমি প্রশ্ন করছি, আপনারাও তো বুঝতে পারছেন, আপনারাও এগিয়ে আসুন।"
একই কথা বলেন অভিনেতা ও পরিচালক পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়। তিনি জানান, "একজন পরিচালক, একজন প্রযোজক অনেক কষ্টে একটা বিনিয়োগ নিয়ে আসে। তবে ইন্ডাস্ট্রিতে একটা কাজ শুরু হয়। তাঁদের সঙ্গে যে এই বৈমাত্রিয় আচরণ, অপমানজনক আচরণের জবাব কে দেবে? এটা আমার প্রশ্ন। শ্রীজিৎ রায় কিন্তু টিভি ইন্ডাস্ট্রিতে বড় নাম। ও যে কাজগুলো করে, তাঁর কোনওটার পরিচালক, কোনওটার প্রযোজক শ্রীজিৎ নিজে। সেগুলোতে কিন্তু তিনশো-চারশো লোকের রুজি রোজগার হয়। আজকে সে নতুন একটা সিরিয়াল শুরু করতে যাচ্ছে। তার সেট তৈরি হচ্ছে। একটি গিল্ডের লোকজনদের আসতে বারণ করে দেওয়া হয়েছে, তাঁরা আসছেন না। তাঁর প্রত্যেকদিনের সেট ভাড়া, ফ্লোর ভাড়া নষ্ট হচ্ছে। এখানে ভেবে দেখার দরকার রয়েছে, এসবে লাভ বা ক্ষতিটা কার?"