কম বয়সী বিধবার মেয়ে হয়ে কিভাবে লেখিকা হয়ে উঠলেন পিউ ?
টিভি নাইনটিন এক্সক্লুসিভ - ভালোবাসায় ক্ষমা চাওয়া ও ক্ষমা পাওয়া দুইয়েরই অধিকার মানুষের থাকে। তবে যদি সম্পর্ক শেষের মুখে হাতে পায়ে ধরতে হয় তাহলে সেই সম্পর্ক শুরু না হওয়াই শ্রেয়।ভুল থেকে শিক্ষা নেওয়া দরকার তবে সেই ভুলের যেন বারবার পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেই দিকেও সমান নজর রাখা প্রয়োজন।বর্তমানে এই ভুল ভালোবাসার শিকার হয়ে থাকেন অনেকেই।এরকমই পরিস্থিতির শিকার হয়েছিলেন পিউ কুন্ডু।তবে একবার নয় একাধিকবার ! তবে তিনি হার মানেননি এবং কিভাবে কাটিয়ে উঠলেন সেই খারাপ পরিস্থিতি ? চলুন সেটাই আজ জেনে নেওয়া যাক।
মাত্র ২৭ বছর বয়সে তার মা যখন বিধবা হন পিউকে নিয়ে তিনি তার বাবা-মায়ের বাড়ি চলে আসেন। এরপর বিরাট কলকাতার বড় বনেদি বাড়িতে বড় হন পিউ। বাবার কি হয়েছিল সেটা ছোট থেকেই জানতেন না তিনি। তবে কোনো পারিবারিক অনুষ্ঠান অথবা বিয়েতে সে যখন যেত তখন সকলের মুখে ' ব্যাড ব্লাড ঘরে এসেছে' এই কথাটি শুনতে পেতেন।তবে সে বুঝতো না ব্যাড ব্লাড কি ? একসময় তার জীবনে প্রথম প্রেমের আবির্ভাব হয়। তার প্রথম বয়ফ্রেন্ড তার ওপর খুবই মানসিক এবং শারীরিক অত্যাচার চালাতো। তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক না করতে চাওয়ায় তার উপর অমানবিক শারীরিক অত্যাচারও চালাতো। তাই একপ্রকার পড়াশোনার বাহানা নিয়ে কলকাতা থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন পিউ।
তিনি ভেবেছিলেন আর্কিওলজি পরতে কেমব্রিজে যাবে। এই স্বপ্ন ত্যাগ করে অগত্যায় নিজের জন্মের শহর কলকাতা ছেড়ে চলে আসেন দিল্লিতে। এশিয়ান এজ থেকে তার ক্যারিয়ার শুরু হয় এবং কিছু বছরের মধ্যে পিউয়ের সঙ্গে তার দ্বিতীয় প্রেমিকের আলাপ হয়। সেই প্রেমিক তার উপর হাত না তুললেও দীর্ঘ চার বছরের সম্পর্কের পরেও তাকে বিয়ে করতে চায়নি।বিয়ের স্বপ্ন দেখালেও আসল সময়ে তাকে প্রতারণা করে। একটি এসএমএস দিয়ে সম্পর্কটি শেষ করে দেয় পিউয়ের দ্বিতীয় প্রেমিক।এই সময়ে সে প্রচুর ভেঙে পরে।সেই সময়ে বাঁচার আশাও হারিয়ে ফেলে পিউ।
পিউ এর মনে তখন চলতে থাকে সে তার বাবার ভালোবাসা পেল না, কোনও পুরুষ তাকে ভালোবাসতে পারল না তাহলে সে কেন বাঁচবে? তারপর চৌত্রিশ বছর বয়সে সে বই লেখা শুরু করেন।তার লেখা দ্বিতীয় বই 'সীতাস কার্স' খুবই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।পাঠকরা প্রচুর পরিমাণে এই বইটির প্রশংসা করতে শুরু করে এবং পিউয়ের জীবনে সব কিছু ভালো হতে আরম্ভ করে। এখান থেকে নিজের মনোবল ফিরে পেয়ে পিউ নিজের তৃতীয় বইটি লেখা শুরু করলেন তখন তার ক্লিনিকাল ডিপ্রেশন ধরা পড়ে।
যে মনোবিদের কাছে পিউ চিকিৎসার জন্য গিয়েছিলেন সেখানে সে তার মাকে ব্যাঙ্গ করে বলে মেয়ের আটত্রিশ বছর বয়স হয়েছে, বিয়ে দিয়ে দিন ! পুরুষের সঙ্গ ছাড়া রয়েছে তাই একাকীত্বে ভুগছে। সেই দিন থেকে পিউ ঠিক করে যে সে তার এই করুন অভিজ্ঞতা নিয়ে নতুন বই লিখবেন। তবে বই প্রকাশনার সময় কোনও বিখ্যাত পাবলিশার্স সেই বই প্রকাশ করতে চায়নি। তবে বইটি যখন প্রকাশ পায় তখন সেটি পাঠকদের কাছে খুবই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
নারীদের যে সকল নিয়মের বাঁধা রয়েছে সেগুলি যখন উঠে যাবে নারী শক্তির প্রকৃত জয় তখনই হবে। সকলের জীবন আলাদা সকলে জীবনে যুদ্ধও আলাদা হয়। সকলের যাত্রাপথ যেমন আলাদা তেমনই সকলের গন্তব্যস্থলও ভিন্ন হয়।যেমন পিউয়ের জীবনে অনেক খারাপ পরিস্থিতি এসেছে তবে উপরওয়ালা তাকে খালি হাতে ফিরিয়ে দেয়নি। পিউয়ের ঘুড়ে দাঁড়ানোর মনোবল তার প্রতি সম্মান আরোও বাড়িয়ে দেয়। নারীশক্তির এই নারীর জন্য টিভি নাইনটিনের পক্ষ থেকে অনেক অনেকে শুভেচ্ছা, ভালোবাসা ও অভিনন্দন রইলো।