ভারতের প্যাডওমেন 26 বছর বয়স পর্যন্ত স্যানিটারি ন্যাপকিন সম্বন্ধে জানতেন না
ভারতের 'প্যাডওমেন' 26 বছর বয়স পর্যন্ত স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করেননি। 36 বছর বয়েসে সব কিছু ছেড়ে পিরিয়ড নিয়ে সচেতনতা গড়ে তোলার উদ্যোগ নেন মায়া বিশ্বকর্মা। এবং তিনি যথেষ্ট সফল হয়েছেন।
পিরিয়ড নিয়ে সভ্য সমাজে আজও খোলাখুলি আলোচনা হয়না।স্যানিটারি ন্যাপকিন কাগজে মুরে লোকচক্ষুর আড়াল করে দেওয়া হয়। ঋতুমতি হলে কোনো শুভ কাজে মেয়েদের থাকা নিষেধ।গ্রামাঞ্চলে আজও মেয়েরা স্যানিটারি ন্যাপকিনের ব্যবহার জানেনা।এই জিনিস গুলোই ভীষণ ভাবে ভাবিয়েছিল মায়া বিশ্বকর্মাকে। ভারত নিজ গরিমায় জগৎবিখ্যাত।কিন্তু আমরা চাঁদের দক্ষিণ প্রান্তে পৌঁছে গেলেও এ দেশের কিছু মহিলারা আজও অন্ধকারে।ঋতুস্রাব হলে গ্রামেঞ্চলে মেয়েরা কাপড় ব্যবহার করে।এর ফলে অনেকাংশে তারা অসুস্থও হয়ে পরেন। তবু ও চিকিৎসকের পরামর্শ নেন না ।কারণ কিছু শ্রেণীর মানুষ আজও ঋতুস্রাবকে মেয়েদের লজ্জা মনে করেন।
এই সব কিছুর উর্দ্ধে গিয়ে নারীকল্যাণের কাজে লেগে পড়েন মায়া বিশ্বকর্মা।
মধ্যপ্রদেশের নরসিংহপুর জেলার এক কৃষক পরিবারে মায়ার জন্ম।পরিবারে স্বচ্ছলতা না থাকলেও পড়া চালিয়ে যান মায়া।জবলপুরের একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বায়োকেমিস্ট্রিতে স্নাতকোত্তর করেন।নবম শ্রেণীতে পড়াকালীন তার প্রথম পিরিয়ড হয়।সেইদিন থেকে 26 বছর বয়স পর্যন্ত মায়াকে কাপড় ব্যবহার করতে হয়েছিল।এর ফলে পরবর্তী জীবনে তার স্বাস্থ্যহানি হয়।তিনি সেই সময় সিদ্ধান্ত নেন মহিলাদের জন্য তিনি প্রচার করবেন।স্যানিটারি ন্যাপকিনের ব্যবহার সম্বন্ধে মেয়েদের বোঝাবেন।সেই মতো তার মহান কর্মসূচি শুরু হয়। প্রথমে দিল্লির AIIMS-এ একজন গবেষক হিসাবে কর্মরত ছিলেন।এরপর লিউকেমিয়াতে ক্যান্সার গবেষক হওয়ার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যান।
36 বছর বয়েসে চাকরি ছেড়ে দিয়ে সমাজকল্যানের কাজে লেগে পড়েন মায়া।2016 সালে শুরু করেন 'সুকর্মা ফাউন্ডেশন'।এই প্রতিষ্ঠান মেয়েদের পিরিয়ড নিয়ে সচেতন করে।পাশাপাশি স্বল্পদামে স্যানিটারি ন্যাপকিন তৈরি করে যা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মহিলাদের দেয়।
মায়া বিশ্বকর্মা বলেন,
“আমার প্রথম পিরিয়ডের সময় যখন আমি 9ম শ্রেণীতে পড়ি, আমাকে প্যাডের পরিবর্তে একটি কাপড় ব্যবহার করতে বলা হয়েছিল এবং আমি 26 বছর বয়সে অবশেষে স্যানিটারি ন্যাপকিনের অ্যাক্সেস না পাওয়া পর্যন্ত তা করতে থাকি। যাইহোক, অস্বাস্থ্যকর পদ্ধতি সেই গঠনমূলক বছরগুলি একটি চিহ্ন রেখে গিয়েছিল কারণ এটি বিভিন্ন সংক্রমণের কারণ হয়েছিল। তারা আমাকে উপলব্ধি করেছে যে, আমার মতো শিক্ষিত ব্যক্তির সাথে যদি এমন ঘটনা ঘটতে পারে, তবে গ্রামীণ এলাকার সেই সমস্ত মহিলার কী হবে যারা সচেতনতার অভাবে আচ্ছন্ন। তখনই আমি জানতাম যে এটি পরিবর্তন করার জন্য আমাকে কিছু করতে হবে,”
মাসিক স্বচ্ছ অভিযান শুরু করে সুকর্মা ফাউন্ডেশন।তথ্য মূলক কর্মসূচি ও সেমিনার করে আদিবাসী অঞ্চলে গিয়ে মহিলাদের শিক্ষিত করে।শুধু তাই নয় মহিলাদের জন্য বিশেষ ক্লিনিক তৈরী হয়।এই কর্মসূচির মাধ্যমে প্রান্তিক অঞ্চলে পিরিয়ড নিয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরী হয়েছে।আর মায়া হয়ে উঠেছেন 'প্যাডওমেন'।