লাল বাতি এলকার মেয়ে ! মায়ের পেশাই কি তার ভবিষ্যত ?
টিভি নাইনটিন এক্সক্লুসিভ - নারী যখন অর্থ বা কোন মূল্যবান উপহারের বিনিময়ে পুরুষকে নিজের দেহ যৌনতা সম্পর্কিত ব্যাপারে দান করে তখন তাকে গণিকা বৃত্তি বলে।গণিকা যারা হয় তারা নারী হন আর যারা মা হন তারাও নারীই হন।সমাজ পতিতালয়ের নারীদের পছন্দ না করলেও সমাজের মানুষই কিন্ত তাদের সঙ্গে সম্পর্কে লিপ্ত হয় এবং তাতে তাদের পেট চলে।এই লালবাতি এলাকার মানুষজনদের কোনো ভবিষ্যৎ হয় না।অনিশ্চিত জীবনের মূল্য তাদের প্রতি পদক্ষেপে দিতে হয়।তবুও তাদের জীবন থেমে থাকে না।নিজের সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে নিজেদের কাজ করে যান।এরকমই লালবাতি এলাকার বাসিন্দা হলেন টুম্পা অধিকারী।তার মা গণিকা হওয়া সত্ত্বেও নিজের মেয়েকে মানুষের মতো মানুষ করেছেন এবং নিজের পায়ে দাঁড়াতে সাহায্য করেছেন।জেনে নেওয়া যাক তারই কাহিনী।
ছোট বেলা থেকেই টুম্পা বড় হয়েছে লাল বাতি এলাকায়।প্রতেকটি বাচ্চারই যেমন স্বপ্ন থাকে স্কুল যাবে, ভালো বন্ধু থাকবে, একে অপরের সঙ্গে মিশবে,খেলবে এবং ভালো পরিবার থাকবে তেমন স্বপ্ন টুম্পারও ছিল।তবে ছোটবেলায় তার এই স্বপ্ন অসম্পূর্ণই থেকে গেছে।কারণ সেই সময় তাদের বসবাসের জায়গায় আলাদা করে খেলার ঘর তো দূরের কথা তাদের নিজেদের ঘর থেকেই বেরোতে দেওয়া হতো না।কারণ তাদের সেই পাড়াতে বাইরের বহু মানুষদের আসা যাওয়া হতো।যাতে সে কোনওভাবে বিপদের মুখে না পরে যায় তার জন্য প্রায়শই তাকে ঘর বন্দি করে রাখা হতো।তবে ঘরের মধ্যে থাকলেও শান্তি ছিল না সেখানে টুম্পাকে বিভিন্ন রকমের হিংস্রতা দেখতে হতো।
সমাজের মতামত অনুসারে টুম্পার মত মেয়েদের কোনও ভবিষ্যত থাকে না,জীবনে ক্যারিয়ার চয়েস বলে কিছু থাকে না, তাই তারা শেষে মায়ের পেশাকেই বেছে নেয়।সমাজের যুক্তিকে ভুল প্রমাণ করবে বলেই টুম্পার নিজের ভবিষ্যৎ গড়ার জেদ তৈরি হয়।তাছাড়াও ছোট থেকে সে তার মাকে গণিকা বৃত্তির জন্য শারীরিক ও মানসিকভাবে অনেক কষ্ট পেতে দেখায় ভেতর থেকে তার কিছু করে দেখানোর জেদ তৈরি হয়েছিল।নিজের পেশা শেষ করে বাড়ি এসেও টুম্পার মাকে অত্যাচারিত হত।আর এই অত্যাচার করত টুম্পার নাম মাত্র বাবা।তার মায়ের সব উপার্জন করা টাকা টুম্পার বাবা নিয়ে মদ খেত এবং তার মাকে মারধর করত।সুস্থ পরিবেশ না থাকায় টুম্পা তার বাড়ি থেকে পালিয়ে বাঁচতো।৫০ বছরের ঊর্ধ্বের মহিলারাও সামান্য ৪০,৫০ টাকার জন্য রাত ১২ তার পর সেই পেশায় যোগদান করতেন। সামান্য অর্থ উপার্জনের জন্যই পতিতালয়ের নারীরা একপ্রকার প্রতিনিয়ত ধর্ষণ হয় এবং মানসিকভাবে অত্যাচারিত হয়।ছোটবেলা থেকে ওই গলিতে বড় হওয়ায় টুম্পার মত মেয়েরা এইসবের সাক্ষী থাকতো এবং একটি অসুস্থ পরিবেশে জীবন যাপন করতে বাধ্য হতো।
স্কুলে গেলেও তার শিক্ষিকারা টুম্পাকে পড়াশোনা ছেড়ে দেওয়ার কথা বলতো।কারণ স্কুলের শিক্ষিকারাও ভেবে নিয়েছিল যে সে ভবিষ্যতে মায়ের পেশাতেই ঢুকবে তো পড়াশোনার থেকে তার মেক আপ করা শেখাই বেশি শ্রেয়।বিদ্যালয়ে অভিভাবকদের জন্য মিটিং ডাকা হলেও টুম্পা তার মাকে নিয়ে যেত না তার কারণ সে জানতো তার মাকেও হয়তো এরকম প্রশ্নের শিকার হতে হবে।তার মায়ের পেশার জন্য ক্লাস ১২ এ পড়াকালীন টুম্পাকে তার বন্ধুদের থেকে নানান কুমন্তব্য শুনতে হতো।বাইরের পরিবেশের প্রশ্ন ও ঘরের খারাপ পরিবেশ টুম্পাকে যেন পিষতে থাকে।কিন্ত এর মধ্যেও ঝিনুক যেমন মুক্তকে লাগে তেমনই টুম্পাকে তার মা আগলে রাখতো। শুধু নিজের সন্তানকেই নয় টুম্পা তার আশেপাশের সকল নারীদের সন্তানকেই সুরক্ষিত রাখার প্রচেষ্টা চালাতো।
বর্তমানে টুম্পা একটি এন জিওতে কাজ করে।বিভিন্ন বড় সংস্থার থেকেও ফেলোশিপ পেয়েছে।বর্তমানে টাইমস অফ ইন্ডিয়ার থেকেও সে আওয়ার্ড পেয়েছে।'নারী শক্তি 'র এক অভূতপূর্ব দৃষ্টান্ত রয়েছে টুম্পা এবং তার মায়ের মধ্যে।নারীরা চাইলে সব করতে পারে।পরিস্থিতি যতই খারাপ হোক নারী তার অদম্য জেদ, ইচ্ছা ও সাহসিকতা দিয়ে সকল কাজ জয় করতে পারে।যেমন হেরে যায়নি টুম্পা।টুম্পার বড় হওয়ার পেছনে অবশ্যই টুম্পার মেয়েরও অনেক হাত রয়েছে তার কারণ টুম্পার মা নিজে খারাপ থেকেও তার সন্তানকে আলোর পথে নিয়ে গিয়েছে।সমাজের উচিত টুম্পা ও তার মায়ের মতো নারীকে কুর্নিশ জানানো।