কুমারী বয়সে একটিই ভুল,তারপর ঘুরে যায় জীবনের মোর
টিভি নাইনটিন এক্সক্লুসিভ - জীবন কোনও কিছুতেই থেমে থাকে না। বহমান এই জীবনে কম বেশি ভুল প্রায় সকলেরই হয়ে থাকে।তবে ভুল থেকে শিক্ষা নেওয়াই হলো জীবনের মূল উদ্দেশ্য। তেমনই জীবন থেমে থাকেনি রনিতারও। রানীগঞ্জের মেয়ে হলেন রনিতা বসু। মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করায় ছোট থেকেই সে তার নিজস্ব চাহিদা সম্পর্কে সতর্কিত থাকতেন।মা বাবার আদরের মেয়ে রনিতা ধীরে ধীরে বড় হয়ে উঠলো।একসময় তার কলেজে যাওয়ার সময় এলো।
মা, বাবা, দাদাকে ছেড়ে রনিতার বাড়ির থেকে দূরে যাওয়ার ইচ্ছে ছিল না।একপ্রকার পরিবারের ইচ্ছের জন্যই রনিতাকে হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা করতে হয়েছিল।বাড়ির থেকে দূরে এসে রনিতার পড়াশোনায় মন না বসলেও তাকে পড়াশোনা করতে হয়েছে।প্রথম বর্ষের পরীক্ষার কিছু দিন আগে তার জীবনে সন্তু বিশ্বাস নামক একজন দাদার আবির্ভাব হয়।
হোস্টেলের মেয়েদের সঙ্গে রনিতার তেমন ভালো সম্পর্ক না তৈরি হলেও পাশের ফ্ল্যাটে থাকা সন্তুর সঙ্গে তার বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল।রনিতা তাকে বন্ধুর মতোই দেখলেও সন্তুর রনিতার প্রতি দুর্বলতা কাজ করতো। অংকের কোনও ফর্মুলা না জানা থাকলে সন্তুর সাহায্য নিতো রনিতা।সন্তুর সঙ্গে মিশে তার পরীক্ষায় ফলাফলও ভালো হতে শুরু করে।রনিতাকে নতুন জায়গাকে অনেকটা আপন করে নিতে সাহায্য করেছিল সন্তু।তার বাড়ির জন্য মন খারাপ করাও বেশ কমে গিয়েছিল। হোস্টেলের মেয়েদের সঙ্গেও মিশতে শুরু করেছিল রনিতা।
২০১৭ সালে দ্বিতীয় বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষার আগে রনিতাকে সন্তু নিজের মনের কথা জানায়।রনিতা সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলে সন্তুর আচরণ বদলাতে শুরু করে।এক পর্যায়ে গিয়ে সন্তু হয়ে ওঠে প্রতিশোধপরায়ণ।
রনিতার গার্লস হোস্টেল কাছে থাকায় একদিন রাতে মেয়েদের হোস্টেলের বাথরুমে ঢুকে রনিতার গোপন ভিডিও রেকর্ড করে আনে সন্তু।পরের দিনই সন্তু সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল করে দেয় সেই ভিডিও।কিছুক্ষণের মধ্যেই রনিতার সুন্দর জীবন বিতৃষ্ণায় ভোরে ওঠে।তার মা বাবা সব ঘটনা জেনে মেয়েকে নিয়ে বাড়ি চলে আসে।পড়াশোনা বন্ধ করে ঘরবন্দি করে দেয়। এই ঘটনার পর সন্তু বিশ্বাস পলাতক হয়ে যায় এবং ধীরে ধীরে রনিতা মানসিক অবসাদে ভুগতে শুরু করে।সমাজের চাপ ও পরিবারের অবিশ্বাস রনিতাকে ভেতর থেকে শেষ করতে থাকে।অনেক বার আত্মহননের পথ বেছে নিলেও তার সেই সাহস কখনই হয়ে ওঠেনি।
একদিন তার মাকে লুকিয়ে কাঁদতে দেখে ফেলে রনিতা।সেই দিন তার হুশ ফেরে যে আর যাই হয়ে যাক তাকে বাঁচতে হবে, লড়তে হবে।আর যাই হোক তার তো কোনও দোষ ছিল না তবে সে কেন এরকম জীবন যাপন করবে।রনিতা সেই দিনের পর থেকে আর পেছন ফিরে তাকায়নি।রনিতা ঘরে থেকেই পড়শোনা শুরু করে এবং পরীক্ষার সময় কলেজে গিয়ে পরীক্ষা দিতে থাকে।এরপর রেকর্ড মার্কস নিয়ে গ্র্যাজুয়েশন পাস করে।
তারপর এম. বি. এ কোর্স করে প্রাইভেট সেক্টরে ভালো কোম্পানিতে কাজে যোগ দেয়।পরবর্তীতে তিনি কর্মে উন্নতি করে বেঙ্গালুরুতে একটি বড় অ্যাপার্টমেন্ট কিনে মা বাবাকে সেখান নিয়ে চলে আসে। বর্তমানে রনিতা বসু সুখে, স্বচ্ছন্দে জীবন যাপন করছেন।
'নারী শক্তি' অর্থাৎ শুধু নারীর স্বাধীনতাকেই বোঝায় না।নারীর স্বাধীনভাবে বাঁচার ক্ষমতাকেও বোঝায়।সমাজ নারীকে সংকীর্ণ করতে চাইলেও রনিতার মতো অদম্য জেদি, উচ্চাকাঙ্খী মেয়েদের ডানা ছেটে ফেলতে পারে না। আশা রাখা যায় রনিতা নিজের জীবনে আরও বড় হবে এবং সাফল্যের আকাশে উড়তে সক্ষম হবেন।